আর মাত্র কয়েকদিন পরই ঈদ। নিশ্চয়ই সবার কেনাকাটা এরইমধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে? কেউ কেউ হয়তো এখন লিস্ট করছেন সদাইপাতি কী কী নিবেন সেগুলোর। এসবের মধ্যে কি ঘর পরিষ্কারের কথা ভুলে গেলেন? নাকি ব্যস্ততায় করা হয়ে উঠছে না? কারণ যেটাই হোক, সময় কিন্তু বেশিদিন নেই। এখনই গোছগাছ করা শুরু না করলে বা দরকারি জিনিসপত্র কোথায় কীভাবে রাখবেন তা ঠিক না করলে ঈদের দিন বেশ এলোমেলো অবস্থায় পড়ে যাবেন। চলুন আজ তাহলে জেনে নেয়া যাক ঈদের আগে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য কোন কোন বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে সে সম্পর্কে।
ঈদের আগে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি নিবেন যেভাবে
১) ঘরের পরিচ্ছন্নতা
ঘর শুধু ঈদের আগেই পরিষ্কার করতে হবে তা কিন্তু নয়। তবে ঈদ আসলে আনন্দের আমেজ তৈরি হয়। সেজন্য মন ভালো রাখতে ঘর পরিষ্কার করা জরুরি। এজন্য সবার আগে ঘরের অপ্রয়োজনীয় সব জিনিস সরিয়ে ফেলতে হবে। সেই সাথে ঘরের আনাচে কানাচে জমে থাকা ধুলোময়লা ঝাড়ু দিয়ে ঝেড়ে মুছে ফেলতে হবে। সেইসাথে ঘরের সব লাইট, ফ্যান, পর্দা লাগানোর রড, রান্নাঘর ও ঘরের জানালা, বিছানার নিচে, বাসার সামনের এরিয়া সব ক্লিন করতে হবে ভালোভাবে। বাসায় এসি থাকলে সেটিরও সার্ভিসিং করিয়ে নিন এই ঈদ মৌসুমে।
২) পছন্দের চাদর ও কুশন
ড্রয়িং রুমে যে সোফাটি রেখেছেন তার কভার আর কুশন কি অনেকদিন হয়ে গেছে বদলানো হচ্ছে না? তাহলে ঈদের আগে এই কাজটিও সেরে ফেলুন। বিছানার জন্য এমন চাদর বাছাই করুন যেগুলো উজ্জ্বল রঙের হয়। এতে ঘরে আলো আসবে। ডাইনিং টেবিলে খাবার পরিবেশন করার আগে পাতলা ট্রান্সপারেন্ট কাগজ বিছিয়ে দিন। এতে ক্লথ ভালো থাকবে। বসার ঘরে যদি ফ্লোরিং করা হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে হালকা একরঙা চাদর আর বিভিন্ন নকশার কুশন কভার সাজিয়ে নিতে পারেন।
৩) রান্নাঘর ও ফ্রিজ পরিষ্কার
ঈদের আয়োজন মানে রাঁধুনিদের রান্নাঘরেই বেশ লম্বা একটা সময় কাটানো। আর এজন্য এই জায়গা পরিষ্কার রাখা সবচেয়ে জরুরি। রান্নাঘরের মেঝে ও সিংক জীবাণুনাশক দিয়ে আগেই পরিষ্কার করে নিন। ঈদের দিনের সুবিধার জন্য শো কেস থেকে প্লেট, গ্লাস, চামচ ইত্যাদি বের করে ধুইয়ে মুছে রাখতে পারেন।
ফ্রিজে যদি এমন কিছু থাকে যেগুলো অনেক আগে তুলে রেখেছেন অথচ আর খাওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাহলে সেগুলো বের করে ফেলুন। এরপর ফ্রিজ খালি করে ডিটারজেন্ট দেয়া পানিতে নরম কাপড় ভিজিয়ে ফ্রিজের ভেতরটা ভালো করে মুছে নিন। গন্ধ দূর করার জন্য ব্যবহার করতে পারেন ভিনেগার বা লেবুর রস।
৪) ময়লা জমিয়ে না রাখা
ঘর পরিষ্কারের পর বাইরে যেন কোনো ময়লা না থাকে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। প্যাকেট বা সিগারেটের টুকরো, জুতোর ধুলা, কাগজের টুকরো এগুলো বাইরের সৌন্দর্য কমিয়ে দেয়। তাই ঘরের সাথে সাথে বাইরেও নজর দিন। আর কাটাকাটির পর মাছ, মাংস, সবজির অবশিষ্টাংশ জমিয়ে না রেখে ফেলে দিন। এতে দুর্গন্ধ হবে না।
৫) প্রয়োজনীয় ওষুধ কাছে রাখা
ঘরে সুঘ্রাণের জন্য এয়ার ফ্রেশনার, ব্যবহারের জন্য টিস্যু বক্স এগুলো কিনতে আমাদের যতটা মনে থাকে, ততটাই ভুলে যাই দরকারি ওষুধ কেনার কথা। এক মাস রোজা রাখার পর সকাল থেকে নানা ধরনের খাবার খাওয়ায় অনেকেরই বদহজম, অ্যাসিডিটি, পেটের সমস্যা হতে পারে। তাই এসব সমস্যার যে ওষুধগুলো রয়েছে, সেগুলো ঘরে রাখা জরুরি। ঈদের সময় ফার্মাসি খোলা নাও পেতে পারেন। তাই আগে থেকে কিনে রাখাই শ্রেয়।
৬) নতুন পর্দা
ঈদে ঘরের চেহারা বদলাতে নতুন পর্দা লাগাতে পছন্দ করেন অনেকেই। এক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। ঘর আলোকিত ও উজ্জ্বল রাখার জন্য হালকা রঙের পর্দা বেছে নিন। ডাইনিং রুমের জন্য বেছে নিন বাদামি, চকলেট বা মেরুন কালারের পর্দা। বেডরুমের জন্য বেছে নিতে পারেন গোলাপি, সবুজ, আকাশি বা পিচ কালারের পর্দা। এতে ঘরে যেমন আলো আসবে, তেমনই ঘরের স্নিগ্ধতাও বজায় থাকবে।
৭) ঈদের বাজার
ঈদের আগে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিতে বাজারসদাই কমপ্লিট করে ফেলা জরুরি। রান্নার জন্য কী ধরনের মসলা লাগবে সেটা ঠিক করার আগে কী কী রান্না করবেন সেই মেন্যু ঠিক করে ফেলুন। এতে লিস্ট করতে সহজ হবে। সেই সাথে প্যাকেটজাত দুধ, কোল্ড ড্রিংকস, নানা ধরনের ফলের জুস, আইসক্রিম, ফ্রোজেন নানা আইটেম ইত্যাদি ফ্রিজে রেখে দিন। মসলা গুঁড়া করে বা বেটে রাখতে পারেন। এতে রান্নার সময় হ্যাসেল ফ্রি থাকা যাবে।
৮) ইনডোর প্ল্যান্ট
ঘর গোছানো শেষে কোনোকিছুর কি কমতি লাগছে? তাহলে ঘরের কোণে বা টেবিল, শেলফে রেখে দিন ইনডোর প্ল্যান্ট। পুরো ঘরের সৌন্দর্য বদলে যাবে পলকেই। ঘরে যেসব ইনডোর প্ল্যান্ট রাখতে পারেন- মানিপ্ল্যান্ট, লাকি ব্যাম্বু, ফিলোডেনড্রন, মিকান্স, স্নেক প্ল্যান্ট ইত্যাদি। ঘরের শীতলতা বজায় রাখতে এই প্ল্যান্টগুলো সাহায্য করবে।
৯) ল্যাম্প ও ফুল
অনেকদিন ঘরের ফার্ণিচার একরকম থাকলে দেখতে একঘেয়ে লাগে। তাই ঈদের সময় কিছুটা অদলবদল করতে পারেন। মেঝেতে বিছিয়ে দিতে পারেন শতরঞ্জি বা রাগ। টেবিলের মাঝে বা বেড টেবিলে রাখতে পারেন তাজা রজনীগন্ধা, গোলাপ বা জারবেরা। সন্ধ্যায় ঘরে আলোছায়ার খেলা দেখতে চাইলে লাগাতে পারেন ল্যাম্প, মরিচ বাতি বা সুগন্ধী মোমবাতি। দরজার সামনে বা বারান্দায় লাগাতে পারেন উইন্ড চাইম। বাতাসে যখন চাইম নড়বে বেশ সুন্দর একটা মৃদু আওয়াজ হবে।
১০) রিসাইক্লিং
ঘরবাড়ি পরিষ্কার করার সময় সবকিছু শুধু ফেলে দিলেই হবে না, চেষ্টা করবেন যদি কোনো জিনিস রিসাইকেল করার, সেটাও করবেন। যেমন- কার্ডবোর্ড বক্স, প্লাস্টিক কন্টেইনার, ঘরে পড়ে থাকা কেবল, পুরনো ইলেকট্রনিক্স ইত্যাদি। ঘরে খুঁজে দেখুন এগুলো ছাড়া অন্যকিছু রিসাইকেল করা যায় কিনা।
১১) নতুন টাকা
অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন ঈদের আগে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি হিসেবে নতুন টাকা কেন আসবে? নতুন টাকা রাখা হয় সালামি দেয়ার জন্য। যদি এখনই নতুন নোট গুছিয়ে না রাখেন তাহলে ঈদের দিন বেশ ঝামেলায় পড়ে যাবেন। ব্যাংকে যেয়ে ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০ যে টাকার নোট দরকার, সেগুলো নিয়ে এসে আলমারিতে রাখুন, ভাগ ভাগ করে রাখুন আগেই যেন দেয়ার সময় ঝামেলা না হয়।
১২) কিছু খাবার তৈরি করে রাখা
ঈদের দিন সকালটাই শুরু হয় নানা ব্যস্ততায়। কে কোনটা খাবে, কী পরবে, কখন নামাজে যাবে, বাড়িতে কারা কারা আসবে এসব নিয়ে বেশ দৌড়ঝাঁপের মধ্যে থাকতে হয়। এসবের মধ্যে আলাদা করে কোনো খাবার লম্বা সময় ধরে বানানো, বেকিং আইটেম করা বেশ ঝক্কির ব্যাপার। তাই এই কাজগুলো যতটা সম্ভব আগেই গুছিয়ে রাখতে হবে। সিঙারা, সমুচা, আলুর চপ, কাবাব এর মতো যে ফ্রোজেন আইটেমগুলো আছে সেগুলো আগেই বানিয়ে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। বেকিং আইটেমেও যদি কোনো কিছু মনে হয় আগে বানিয়ে রাখলে সুবিধা হবে সেটাও করুন। সেই সাথে ফুড ডেকোরেশনের সব আইটেমও আগেই কিনে রাখুন।
ঈদ মানেই আনন্দ, পরিবারের সাথে মুহুর্তগুলো ভাগ করে নেয়া। এ দিন বাড়ি ভর্তি মানুষজনের যাওয়া আসা থাকে। হইচই, আড্ডা, গল্পে সবাই মেতে থাকে। আপনিও চেষ্টা করবেন এই মুহূর্তগুলো উপভোগ করার। সবাইকে আনন্দের মাঝে রেখে আপনি একা হয়ে শুধু কাজ করে গেলে কিন্তু হবে না। সবাইকে নিয়ে একসাথে উপভোগ করতে না পারলে কি আর ঈদের মজা থাকে বলুন? তাই ঈদের আগে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি আগেই সামলে নিন, যেন পরে কাজকে বোঝা মনে না হয়। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আপনার ঈদ আনন্দে কাটুক।
ছবি – সাটারস্টক